সৌখিন ফটোগ্রাফার

IMG_20150421_194111

১। সন্ধ্যায় অফিস থেকে বের হয়ে একা একাই দৃকে গেছিলাম, একটা ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন দেখতে। বাংলাদেশে থাকা ৩৯টি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেদের, যারা সৌখিন ফটোগ্রাফার, তাদের বাংলাদেশের উপরে তোলা ছবির প্রদর্শনী দেখতে। এক্সিবিশন এর টাইটেল “বাংলাদেশ থ্রু আওয়ার আইস”। একটু কৌতুহল আর একটু ভয়ে ভয়েই গেছিলাম । কৌতুহল একজন দেশী সৌখিন ফটোগ্রাফার হিসেবে, একজন বিদেশি সৌখিন ফটোগ্রাফার কিভাবে দেখে আমাদের দেশটাকে। আর ভয়েভয়ে কারন কতগুলা যে নেগেটিভ ছবি দেখতে হয় দেশের উপর। গুনে দেখলাম ৬৫টা ছবি আছে এক্সিবিশনে। অবাক হয়ে আবিষ্কার করলেম, তারমধ্যে ১ টা, ম্যক্সিমাম ২ ছবিকে নেগেটিভ ছবি ধরা যায়। বাকি গুলো বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের মানুষের উপর বিভিন্ন ধরনের অন্য সব ছবি, যেগুলোকে অন্তত নেগেটিভ ছবি বলা যায় না। মন থেকে কৃতজ্ঞতা বোধ করলাম, এই বিদেশী সৌখিন ফটোগ্রাফারদের প্রতি, যে দেশে চাকরী করে, সেই দেশের প্রতি এই সামান্য সৌজন্যবোধ এর কারনে।

২। এর অন্যদিকে, আমাদের দেশের বিভিন্ন ফটোগ্রাফারদের তোলা ছবি বা বিভিন দেশী ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন বা কম্পিটিশনের ব্যাপারটা দেখি পুরোটা উল্টা। আমার ব্যাক্তিগত অবজারভেশন হল, দেশী ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে ট্রেন্ডটা হল, নিজের দেশের যত বেশি নেগেটিভ ছবি, তত বেশী হাততালি, তত বেশী রেকগনিশন, তত বেশী ফটোগ্রাফার হিসেবে জাতে উঠা, তত বেশী পুরষ্কারপ্রাপ্তির সম্ভাবনা এবং অনেক ক্ষেত্রে পুরষ্কারপ্রাপ্তি। আমরা দেশী ফটোগ্রাফাররা, যত সিনসিয়ারলি নিজের দেশ এবং নিজের দেশের মানুষের অসম্মান, কষ্ট আর অপমান বেচতে পারি, অন্য কেউ মনে হয় তা পারে না।

৩। নামার সময় দৃকে দোতলায় দেখি, আরএকটা প্রদর্শনী হচ্ছে। “ফটোগ্রাফি এবং পেইন্টিং এক্সিবিশন”, কোন একটা এনজিওর আয়োজনে। পেইন্টিং বোঝার মত সুক্ষ রুচিবোধ বা মেধা আমার নাই। ফটোগ্রাফি কথাটা দেখে ওখানে ঢুকলাম। সব মিলে ২০টা মতো ফটোগ্রাফ আর অনেকগুলো পেইন্টিং। যেটা মজা লাগল, এই বিশটা ছবির মধ্যে, ৬/৭টা নেগেটিভ ছবি এই দেশের, যেখানে এই এনজিও কাজ করে। ৬/৭ টা এনজিওর কর্মকান্ড বেচামুলক ছবি, যেগুলাতে এনজিওর লোগো পরিস্কার দেখা যাচ্ছে আর বাকী গুলো অন্য কিছু ছবি। এক্সিবিশনে ডোনেশন কালেকশনের ব্যাবস্থাও আছে বলে মনে হল। এনজিওরা যত প্রফেশনালী নিজের দেশ এবং নিজের দেশের মানুষের অসম্মান, কষ্ট আর অপমান বেচতে পারে, অন্য কেউ মনে হয় তা পারে না।

৪। লেখার সাথের ছবিটা কূটনীতিকেদের এক্সিবিশন এর, মোবাইলে তোলা । তেমন কোন মানুষ নাই। ছবির সমনের আর পেছনের এই দুইজন মানুয মাত্র, আমি যখন গেছিলাম।

৫। বের হয়ে, ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম বিদেশী কূটনীতিকেদের তোলা ছবিগুলোর কথা। একটা প্রচলিত কথা আছে, “কূটনীতিকরা নাকি না বলেন না আর মহিলারা নাকি হ্যাঁ বলেন না”। কি জানি হয়ত এটাই আসল ব্যাপার। সেজন্যই কূটনীতিকদের তোলা নেগেটিভ ছবি নাই। অপেক্ষায় আছি, বিদেশী অন্য কোন পেশার সৌখিন ফটোগ্রাফারদের ছবি নিয়ে যদি কেউ প্রদর্শনী করে, তাহলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *